স্বামীর লিঙ্গ কেটে কারাগারে স্ত্রী

মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় মেয়ের পরকীয়ার জেরে স্বামীর লিঙ্গ কেটে দিয়েছে এক স্ত্রী। ১৭ জুন শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বাড়ৈখালী বাজারে আল-নাবিল ট্রেইলার্সের মালিক ওয়ারিশুল ইসলামের এই ঘটনা ঘটে। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবের ছেলে এই ওয়ারিশ। ঈদুল ফিতরের দিন রাতে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ওয়ারিশ।

প্রায়ই তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হত বলে জানান ওয়ারিশ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্ত্রী একাধিকবার বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে আবার ফিরে আসেন।

ওয়ারিশ সৌদি আরব থাকাকালীন ২০১৩ সালে স্ত্রী দোলন আক্তার উজ্জ্বল নামের এক যুবকের সঙ্গে মোবাইলে ফোনে পরকীয়া করে বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রায় দেড় মাস বাড়ির বাইরে ছিলেন।

স্ত্রীর এসব কু-কর্মের কারণে তিনি দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন এবং স্ত্রীর এসব কু-কর্মের কথা যেনেও তিনি শুধুমাত্র ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা করে বড় ভাইদের সকলের নিষেধ উপেক্ষা করে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।

তবুও থেমে থাকেনা দোলন আক্তার। মায়ের বদনামের কথা জানাজানির ভয়ে এরই মধ্যে এক প্রবাসী ছেলের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে দেন ওয়ারিশ। মেয়েও মায়ের পথেই এগুতে থাকে বলে জানান বাবা।

বিভিন্ন সময়ে মেয়ের জামাই তার কাছে নালিশ করত মেয়ের ফোন ব্যস্ত থাকা নিয়ে। এমনকি অন্যত্র প্রেমে লিপ্ত হবার প্রমাণও পায় ওয়ারিশ।

গত ৬ জুন মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন ওয়ারিশকে ফোন করে জানান তার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওয়ারিশ মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং বাবা হিসেবে শাসন করেন।

বাড়ৈখালী বাজারের জুতা দোকানি শাকিলের সঙ্গে তার পরকীয়ার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানালে মেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে সবার কাছে বলতে থাকেন বাবা আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়েছে।

পরে ওয়ারিশের মেয়ে তার শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। ওয়ারিশ বলেন, এরপর সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার কোন ঝগড়া ঝাটিও হয়নি।

হঠাৎ ঈদের দিন রাতে তার স্ত্রী দোলন আক্তার তাকে সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ দিয়ে হাত পা বেঁধে ধারালো ব্লেড দিয়ে যৌনাঙ্গ কেটে দেয়।

পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ওয়ারিশের চিৎকারে আশে পাশের মানুষ এসে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ এসে দোলন আক্তারকে আটক করে নিয়ে যায় এবং পরে কারাগারে প্রেরণ করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় কান্না করতে করতে ওয়ারিশ বলেন, আমার তো সব শেষ, আমি আর কি বলবো, আমি শুধু মরার আগে এর বিচার চাই।

যদি আমি অপরাধী হই তাহলে আমি যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেবো। তবুও যেন সঠিক বিচারটা হয়।

এ ব্যাপারে বাড়ৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম তালুকদার জানান, ওয়ারিশের বিরুদ্ধে কখনও কোন অভিযোগ আসেনি। কিন্তু শুনেছি প্রায়ই তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হত। এমনকি ওই মহিলা (দোলন আক্তার) একবার পরকীয়া করে পালিয়েও যায়। পরে আবার তাকে ফিরিয়ে আনে ওয়ারিশ।

তিনি বলেন, তবে এই মহিলা আর তার মেয়ে যে ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয় এই রকম ঘটনা আমার ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত দুর্নামের। আমি চাই এর বিচার হোক।

এটা সামাজিক এবং নৈতিক অবক্ষয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেন সেলিম তালুকদার।

এ ঘটনা পরবর্তী ১৭ জুন ওয়ারিশের মেজ ভাই বাদি হয়ে শ্রীনগর থানায় একটি এটেম্পট টু মার্ডারের মামলা দায়ের করেন।

উক্ত মামলার তদন্ত অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম রোববার যুগান্তরকে জানান, ওইদিন সকাল ১০টায় আমরা ওয়ারিশের বাড়িতে যাই এবং আসামী দোলন আক্তারকে একটি ঘরে বন্ধী অবস্থায় পাই।

পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, শ্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাগে ক্ষোভে ধারালো ব্লেড দিয়ে লিঙ্গ কেটে দেন বলে জানান দোলন আক্তার।

আমিনুল ইসলাম বলেন, তার জবানবন্দী অনুযায়ী একটি ধারালো ব্লেডও উদ্ধার করি ঘটনাস্থল থেকে। আসামি এখন কারাগারে আছেন। মামলার তদন্ত চলছে।