এবার জার্সি ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত!

চার সহস্রাধিক কিলোমিটার দূরে চলতে থাকা ফুটবল বিশ্বকাপের আবেদন বাংলাদেশিদের মধ্যে বরাবরের মতো এবারও বেশি। ফুটবলের সর্ববৃহৎ এ আসরে অংশ নেয়া দলগুলোর সমর্থক বাংলাদেশিদের মধ্যে এতটাই বেশি যে বিভিন্ন সময় খেলোয়াড় এবং দেশগুলো দূতাবাসের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশি সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। তবে, এবার বিশ্বকাপে বড় দলগুলো ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ায় সমর্থকদের পাশাপাশি অনেকটাই হতাশ হয়েছে ব্যবসায়ীরাও। জনপ্রিয় দলগুলোর জার্সি তুলে এখন ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

বাংলাদেশে কোনো দলের সমর্থকের সংখ্যা বেশি তার সঠিক কোনো হিসাব না থাকলেও চোখ বুজেই বলে দেয়া যায়, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকের সংখ্যা অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। তাই প্রতিবার বিশ্বকাপে এই দুই দলের জার্সি ও পতাকার চাহিদাও অনেক বেশি থাকে। তবে, গত বিশ্বকাপের পর থেকে দেশে জার্মানির সমর্থকের সংখ্যাও বেড়েছে। ফুটবলে বাংলাদেশ ততোটা অগ্রসর না হলেও বাংলাদেশিদের সমর্থনে অনেকটাই বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্ব। বড়-বড় পতাকা তৈরি থেকে শুরু করে নিজের বাড়িকেও প্রিয় দলের পতাকার রঙে রাঙিয়ে তুলেছেন অনেকে।

যেমন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লালপুর এলাকার জয়নাল আবেদিন ওরফে টুটুল নামের এক ব্রাজিল ভক্ত নিজের ৬ তলা বাড়ির পুরোটাই ব্রাজিলের রঙে রাঙিয়ে এতটাই আলোচনায় এসেছেন যে বাংলাদেশে অবস্থিত ব্রাজিলের দূতাবাস কর্মীরাও বাড়িটি দেখতে গেছেন। আর দেশটির প্রতি বাংলাদেশিদের সমর্থমন পর্যবেক্ষণ করতে ব্রাজিল থেকে এসেছেন তিন সাংবাদিক। বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্রাজিলের সমর্থন দেখে নিজেরা অভিভূত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারা। এছাড়া ওই ব্রাজিল বাড়িতে বসেই আজ ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকা খেলা দেখবেন তারা।

এছাড়া অন্যতম জনপ্রিয় দল আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি সম্প্রতি বাংলাদেশি ভক্তদের নিয়ে একটি ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। সেখানে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কার্যক্রম ফুটে ওঠে। যার মধ্যে ছিল আর্জেন্টাইন পতাকা এবং মেসির ছবি নিয়ে বাংলাদেশি সমর্থকদের র‌্যালি করার দৃশ্য।

অন্যদিকে মাগুরার আমজাদ হোসেন নামের এক কৃষক বিশ্বকাপ উপলক্ষে জার্মানির সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা বানিয়ে আলোচনায় আসেন। নিজের জমি বিক্রি করে ওই পতাকা বানিয়েছিলেন তিনি। সেই পতাকা আকাশে উড়ান জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

যেই দেশের ভক্তরা এমন সব পাগলামি করেন প্রিয় দলকে নিয়ে সেই দেশের ব্যবসায়ীরা জার্সি ও পতাকা বিক্রি নিয়ে একটু বেশি উচ্ছ্বসিত থাকবেন এটাইতো স্বাভাবিক। এবছর তাদের কাছে একদিকে যেমন ছিল ঈদের আনন্দ অন্যদিকে ছিল বিশ্বকাপ। তাই দোকানে প্রচুর জার্সি ও পতাকা তুলেছিলেন তারা। তবে সপ্তাহ না পেরুতেই মন ভেঙেছে তাদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, লাভ তো দূরের কথা চালান উঠানোই অনেকটা কষ্টকর হয়ে যাবে এবার।

তাদের আশঙ্কার কারণ হলো, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ থেকে সমর্থক বেশি থাকে আর্জেন্টিনার। এই দলটি প্রথম ম্যাচ ড্র করলেও খেলায় সন্তুষ্ট করতে পারেনি দর্শকদের। আর বৃহস্পতিবারের ম্যাচে ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে এতটাই আশাহত করেছে যে অনেকেই এখন নিজেদের আর্জেন্টিনার সমর্থক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেও লজ্জা পাচ্ছেন। শুক্রবার সকাল থেকে ফেসবুকে দল ত্যাগের নানা পোস্টও ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে প্রতিজ্ঞা করেছেন কোনোদিন আর আর্জেন্টিনার সমর্থনই করবেন না বলে। দল ত্যাগের হিড়িকও শুরু হয়েছে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মধ্যে।

অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ নেয়া দল ব্রাজিল তাদের ট্র্যাকে থাকলেও প্রথম ম্যাচ ড্র করেছে। দলটির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড় নেইমার ইনজুরি ঝুঁকিতে থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন দলটির সমর্থকরাও। এবার বিশ্বকাপে একের পর এক অঘটনের কারণে তেমন উচ্ছ্বাস দেখাতে ভয় পাচ্ছেন দলটির সমর্থকরাও। হেরে গেলেই পরিচিতজনরা ট্রল করবেন এমন আশঙ্কায় বেশি উচ্ছ্বাস না দেখিয়ে অনেকটাই চুপচাপ রয়েছেন তারা।

জার্মানির নাগরিকরা অনেক ক্ষেত্রেই অহংকারী বলে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে জার্মানির সমর্থকরা অনেকটাই ভদ্র বলে বিবেচিত। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকরা এরই মধ্যে একে অপরকে তাচ্ছিল্য করতে গিয়ে মারামারি করে সংবাদের শিরোনামে আসলেও জার্মানির সমর্থকরা শুধু খেলা নিয়েই ব্যস্ততা দেখিয়েছেন। তবে প্রথম ম্যাচে তারাও হতাশ করেছেন সমর্থকদের। মেক্সিকোর বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছেন তারা। এতে দলের মনোবল অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে তাই পরের ম্যাচে তেমন সাফল্য পেতে বেগ হবে তাদের এমন ধারণা থেকে এই দলের সমর্থকরাও তেমন উচ্ছ্বাস দেখাতে চাচ্ছেন না।

সব জনপ্রিয় দলগুলোর পারফরমেন্স এবং তাদের সমর্থকদের মনের যখন এই অবস্থা তখন কপালে হাত তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার (২২ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, জার্সি নিয়ে ব্যবসায়ীরা বসে থাকলেও দোকানগুলোতে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। কপালে হাত দিয়ে বসে আছেন তারা।

বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি দোকানের মোট জার্সির প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আর্জেন্টিনার জার্সি। যেহেতু আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে তাই দলটির জার্সি আর বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

জোবায়ের আহম্মেদ নামের এক ব্যবাসায়ী বলেন, এবার আর্জেন্টিনার জার্সি তুলেছিলেন এক লাখ টাকারও বেশি। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পর থেকেই জার্সি বিক্রি অনেক কমে গিয়েছিল। গতকাল যা খেলেছে তাতে মনে হচ্ছে না এই দলের জার্সি আর বিক্রি হবে। কারণ গতকাল থেকে প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি করে আর্জেন্টিনার জার্সি বিক্রি হলেও আজ সারাদিনেও একটি জার্সি বিক্রি হয়নি।

অপর একজন বলেন, গতকাল পর্যন্তও বিক্রি মোটামোটি ছিল কিন্তু যেভাবে একের পর এক অঘটন ঘটছে তাতে এবার প্রচুর ক্ষতি হবে। মনে হচ্ছে চালান ওঠানো অনেকটাই কষ্টকর হয়ে পড়বে এবার।