তনু নামের মেয়েটির কথা মনে আছে তো?

দেশব্যাপী বহুল আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ২৭ মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল (বুধবার) ২০ জুন। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটন, হত্যাকারী শনাক্ত করা কিংবা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তনুর ঘাতকরা অধরাই রয়ে গেছে।

এদিকে শোক আর বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ বুকে চেপে তনু বিহীন পরিবারে এ বছরও ছিল না ঈদ আনন্দ। দীর্ঘ ২৭ মাসেও তনুর ঘাতকরা চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তনুর পরিবার।

তনুর দুটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ না থাকায় মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি এ নিয়ে এখনও গন্তব্যহীন রয়েছে। তবে কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির ডিএনএ প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করেই দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর এ মামলার যবনিকাপাত টানতে চাচ্ছে সিআইডি। চলতি মাসেই ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে আসতে পারে বলে সিআইডির একটি সূত্রে জানা গেছে।

দীর্ঘ ২৭ মাসেও মেয়ের ঘাতকদের চিহ্নিত করতে না পারায় ক্ষোভ জানিয়ে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, মেয়ের শোকে তনুর বাবা এখন মৃত্যু শয্যায়। আমাদের পরিবারে এ বছরও ঈদের আনন্দ ছিল না। ৬ মাসের ছুটিতে থাকা তনুর বাবার (ইয়ার হোসেন) ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে মেরুদণ্ডের একটি বড় অপারেশন হয়েছে গত ২৮ এপ্রিল। আগামী রোববার তিনি কর্মস্থলে যোগ দেবেন। এসব ঝামেলায় এবারের ঈদে বাড়িতে গিয়ে মেয়ের কবরও জিয়ারত করা হয়নি।

তিনি বলেন, মেয়ের হত্যার পর অনেকেই বাসায় এসে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু এখন আর কেউ আমাদের পাশে নেই, খোঁজ-খবরও নেয় না। সিআইডির জালাল সাহেবও (মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা) খবর নেন না, মামলার কী খবর তাও তিনি জানাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে আপনারা সাংবাদিকরাই খবর নিতে ফোন করেন।

তিনি আরও বলেন, দুইবার মেয়ের মরদেহ ময়নাতদন্ত করার পরও যখন ডাক্তার আমার তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে পায়নি, তখনই বলেছিলাম এ দেশে আমার তনুর বিচার পাবো না। সব আল্লাহ দেখেছেন। ঘাতকরা এখন রক্ষা পেলেও পরকালে পাবে না।

তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ বলছেন, তনুর মামলাটি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। তদন্তে এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে যেখানে ইচ্ছে করলেই তাড়াতাড়ি কিছু করা সম্ভব নয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে অনেককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু দুটি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ নেই, তাই আমাদের ভিন্ন কৌশল নিতে হচ্ছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনের ডিএনএ রিপোর্ট শিগগিরই হাতে পেতে পারি। এরইপরই হয়তো এ মামলার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি বাসায় টিউশনি করতে যায় তনু। নির্ধারিত সময়ে সে বাসায় না ফেরায় স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহের সন্ধান পায়। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে নেয়া হয় কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।

পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।