আগামীকাল ১৪ জুন পর্দা উঠবে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপের। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই বিশ্বকাপ শেষ ফুটবল মাঠে দ্যুাতি ছড়াতে দেখা যাবে না অনেক মহাতারকাকে। এমন পাঁচ গ্রেট ফুটবলারদের নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
হাভিয়ের মাসচেরানো (আর্জেন্টিনা)
২০০৩ সাল থেকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে বীরদর্পে খেলে যাচ্ছেন। খেলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা ক্লাব বার্সেলোনায়। রাশিয়া বিশ্বকাপ হতে পারে ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের শেষ বিশ্বকাপ। সর্বশেষ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলার ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা পালন করেছে হাভিয়ের মাসচেরানো। সেবারের সেমিফাইনাল ম্যাচে ডাচ খেলোয়াড় আরিয়েন রোবেনকে করা তাঁর ট্যাকেল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ট্যাকেলের তালিকায়। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ২০১৪ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের প্রতিটি মিনিট মাঠে ছিলেন এই মিডফিল্ডার।
আন্দ্রে ইনিয়েস্তা (স্পেন)
স্পেন তথা ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। কিছুদিন আগে ক্লাব বার্সেলোনাকে বিদায় জানিয়েছেন। স্পেনের ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা আসন্ন বিশ্বকাপ শেষ আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে পারেন। তিনিই বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যিনি ২টি ইউরো কাপ ফাইনাল এবং ১টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপ দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞে অভিষেক হয় ইনিয়েস্তার। এরপর ২০১০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে স্পেনের হয়ে সবকটি ম্যাচে খেলেছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে এরই মধ্যে ৩৪ ছুঁয়েছে ইনিয়েস্তার বয়স। আর অবসর না নিলেও ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের কার্টেন রেজারের আগেই যে বুট জোড়া তুলে রাখবেন ইনিয়েস্তা তা নিয়ে হয়তো আর কারোর কোনও সংশয় নেই।
সার্জিও রামোস (স্পেন)
স্পেনের সোনালী দিনের শরিক সার্জিও রামোস। ২০০৮ ও ২০১২ সালের ইউরো জয় থেকে ২০১০ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে দ্রুত ভুলতে চাইবেন তিনি। ২০১২ সালের ইউরো জয়ের পর বড়মঞ্চে আর তেমন সাফল্য নেই স্প্যানিশদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছে এবার স্পেনকে। স্প্যানিশদের রক্ষণে বড় ভরসার নাম অবশ্যই রামোস। সেই সঙ্গে কর্নার থেকে গোল করায় রামোসের জুড়ি মেলা ভার। ইতিমধ্যেই ৩২ ছুঁয়েছে রিয়ালের ব্যাড বয়ের বয়স। পরের বিশ্বকাপে খেলার সম্ভবনা খুব কম। রাশিয়াতেই সম্ভবত শেষ হচ্ছে সের্জিও রামোসের বিশ্বকাপ।
লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইতালির জর্জিও কিয়েলিনিকে কামড়ে রাতারাতি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ। এই ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসিতও হতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের পর অবশ্য বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি। মেসির পাশে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন সুরারেজ। ২০১০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে খেলেন তিনি। তখনও দলের কোচ ছিলেন অস্কার তাবারেজ। সেই তাবারেজ আবারও বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কোচ। এডিনসন কাভানি, লুইস সুয়ারেজের দিকেই তাকিয়ে উরুগুয়ে। ইতিমধ্যেই ৩১ বছর পেরিয়ে গিয়েছেন সুয়ারেজ। চার বছর পর ২০২২ সালে কি বিশ্বকাপে সুয়ারেজকে খেলতে দেখা যাবে? সম্ভবনা কম বলেই মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
‘ছোট থেকেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখে আসছি। সেই বিশ্বকাপ জিতলেও অবসর নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।’ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও অবসর নেবেন না বলছেন সিআর সেভেন। ৩৩ বছর বয়সী রোনালদোর ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের সময় বয়স হবে ৩৭। তাহলে কি বয়সটা কোনও ফ্যাক্ট নয়, ফিটনেসই আসল এই তত্বকে সামনে রেখে এগোচ্ছেন তিনি। রোনালদো যাই বলুন না কেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা কিন্তু রাশিয়াতেই রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ দেখতে পাচ্ছেন।
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
বিশ্বকাপ না জিততে পারলে অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা – পর পর তিন বছর তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও কাপটা হাতের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে আর্জেন্টিনা ও মেসির। ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারার পর হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে নেন মেসি। পরে আবার ফিরে এসেছেন। এবারই মেসির জন্য শেষ সুযোগ, অমরত্ব অর্জনের। মেসি নিজেও জানেন সেটা। এ জন্যই এবার বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের বুটজোড়া পাকাপাকিভাবে তুলে রাখার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।