১১৮ বছর বয়সের বৃদ্ধ আকবর আলী রোজা রাখেন। নামাজ আদায় করেন মসজিদে গিয়ে। বৃদ্ধ আকবর আলীর দাবি অনুযায়ী বাংলা সাত সালে অর্থাৎ ১৩০৭ বঙ্গাব্দে জন্ম। নাতী-নাতনীদের ছেলে-মেয়েদেরও বিয়ে হয়েছে। বৃদ্ধ বললে ভুল হবে অশতীপর বৃদ্ধ। নাহ! ভুল বলা হলো। তিনি বৃদ্ধ নন ১১৮ বছরের যুবক। এই রোদ-গরমের দিনেও দিব্যি রোজা রাখছেন, নামাজ পড়ছেন, এমনকি রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফে বসেছেন স্বরূপদাহ জামে মসজিদে।
আকবর আলী চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ ইউনিয়নের স্বরূপদাহ গ্রামের মৃত আহাদ আলীর পুত্র। একই গ্রামের শ্বশুর বাড়ি তার। ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক আকবর আলী একজন হতদরিদ্র ব্যক্তি। এই বয়সেও তাই নিয়মিতই মাঠে ঘাষ কাটতে যান তিনি। বলছিলেন অন্য কাজ করতে না পারায় কেউ তাকে মজুরী নেই না। সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা ছাড়া আর কোন সুবিধা পান না বলে জানালেন। গল্পের ছলে বলছিলেন আমার বয়স যখন চল্লিশ তখন বিয়ে করি একই গ্রামের রমেছা বেগমকে। তখন তার বয়স মাত্র সাত বছর। তাহলে তো আপনি বাল্য বিয়ে করেছেন বলতেই হেঁসে ফেলেন। আরেকটি মজার কথা হলো আকবর আলীর চেয়ে তার শ্বাশুড়ি বয়সে ১০/১৫ বছরের ছোট ছিল। চাচা এমন হলো কেন? প্রশ্নে তিনি বলেন আমি এট্টু বয়স হলে বিয়ে করিলাম বলে এমন হইল।
তবে বছর ১০/১২ বছর আগে একবার আকবর আলী মারা গিয়েছিলেন বলে ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন কবরও খোড়া হয়েছিল বলে জানালেন মসজিদের ইমাম মুনছুর আলী, মাওলানা গিয়াস উদ্দিনসহ কয়েকজন। পরে তার বড় ছেলে চান্দালী দেখেন বাবা মারা যাননি। গ্রামের বয়স্করাও তাকে দাদা বলে ডাকেন। গতকাল ইফতারের পর স্বরূপদাহ জামে মসজিদে বসেই কথা হয় তার সাথে। বয়স ১১৮ বছর হলেও চোখে চশমা লাগেনা তার। দাতও আছে। এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় বলছিলেন তোমাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। প্রতিবেদকের পিতার নাম বলতেই চিনে ফেললেন। অথচ তিনি মারা গেছেন ১৪ বছর পূর্বে। স্মরণশক্তি প্রবল রয়েছে আকবর আলীর। জীবনকালে ৪৭ ও ৬৫ সালের যুদ্ধ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। দেখেছেন বিশ্বযুদ্ধও। এই গরমে সারাদিন রোজা রাখেন কোন কষ্ট হয়না প্রশ্নে হাস্যোজ্জ্বল ভাবে জবাব দিলেন কোন কষ্ট হয় না। ইতিকাফে বসেছেন, খাবার দিয়ে যাবে কে? বললেন আমার বড়ছেলে। কথোপকথন শেষে মসজিদের বাইরে আসতেই প্রমাণ মিলল।
বড়ছেলে বাবার খাবার হাতে মসজিদে প্রবেশ করছেন। নাম জানতে চাইলে বলেন সবাই আমাকে চান্দালী বলেই ডাকে। কোন যুদ্ধে অংশ নেন নি প্রশ্নে হাস্যরশিক আকবর আলী বললেন মরনের ভয়ে যুদ্ধে গিলামনা। তবে বাবার কথা যে ঠাট্টা সেটি বড়ছেলে চান্দালী শুধরে দিয়ে বললেন ৬৫ সালের যুদ্ধে আমরা লাঠি নিয়ে মাশিলা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। অভাব-অনটন বা বয়সের কারণে কোনই আফসোস নেই আকবর আলীর। নিজেই নিজের সংসার চালান। প্রায় ত্রিশ বছরের ছোট স্ত্রী রমেছা বেগম এখনও তাকে রান্না করে খাওয়ান। তবে বয়সের ব্যাপারে স্থানীয়দের হিসেবের সাথে মেলেনা বৃদ্ধের হিসেব। স্থানীয়রা তার বয়স ১০৮ বছর বলে নিশ্চিত করেন। ১০৮ বা ১১৮ যেটিই হোক শতবর্ষী আকবর আলী সুস্থ থেকেই যেন রোজা ও ইতিকাফ সম্পন্ন করতে পারেন সেই দোয়া কামনা করেছেন সকলের কাছে।