উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী পরিশ্রম না করে টাকার বিনিময়ে কিনছে জিপিএ-৫ এর সনদ। রাজধানীর কয়েকটি স্কুল-কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ পাইয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, টাকার বিনিময়ে ফেল করা শিক্ষার্থীকেও পাস করিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস, জিপিএ-৫ পাইয়ে দেয়া, কলেজ অনুমোদন করিয়ে দেওয়া, আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন বিষয় খোলাসহ বিভিন্ন কাজ টাকার বিনিময়ে করে দিতে ঢাকাবোর্ডসহ প্রায় প্রতিটি বোর্ডে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বোর্ডের পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত এই সিন্ডিকেটের সদস্য। সরকারি চাকরি হলেও এদের অনেকের বদলি হয় না।
তবে শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের পদগুলো বদলিযোগ্য হওয়ায় এসব কর্মকর্তার সঙ্গে চুক্তি হয় স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীদের।
বোর্ডে চাকরি করলে অসত্ প্রক্রিয়ায় কোটিপতি হওয়ার সুযোগ আছে, এ কারণে বোর্ডে পদায়ন পেতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। আবার পদায়ন পেলে তারা আর বোর্ড ছাড়তে চান না। বদলি করার ক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তিদের বিভিন্ন কৌশলে ম্যানেজ করে দীর্ঘ দিন বোর্ডে থেকে কোটিপতি বনে যান তারা।
গত শনিবার বেসরকারি টেলিভিশন মাছরাঙায় জিপিএ-৫ কেনাবেচা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দ্রুত ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। অভিভাবকরা বলছেন, জিপিএ-৫ বিক্রি দীর্ঘ দিন ধরেই হচ্ছে। নিম্নমানের এক শ্রেণীর কলেজের সাথে বোর্ডের যোগসাজশ দীর্ঘদিনের। ফলে জিপিএ-৫ বেচাকেনা সহজ হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও জিপিএ-৫ কেনাবেচার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জিপিএ-৫ কেনাবেচার ঘটনা তদন্তে গতকাল সোমবার চার সদস্যবিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করেন মন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহামুদ-উল-হক কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব আহমদ শামীম-আল রাজী ও উপসচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।
এর আগে একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক আহাম্মেদ সাজ্জাদ রশীদকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন—ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. হারুন অর রশিদ এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ইউনূসুর রহমান। গত রবিবার এ কমিটি গঠন করার পর দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডের অধীনে ১৫৮টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১২২৫টি। রাজধানীর সব চেয়ে বেশি কলেজ রয়েছে উত্তরায়। গত ১০ বছরের রাজধানীতে প্রায় ১৫০টি কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে উত্তরায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২৩টি। এসব কলেজের শিক্ষাদানের ন্যূনতম সুবিধা নেই। উত্তরার ঢাকা বয়েজ কলেজ, ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ, ব্রিলিয়ান্ট কলেজ, মেগাসিটি কলেজ, উত্তরা ইউনাইটেড কলেজের বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। অভিভাকবকদের কাছে লাখ টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, নিয়ম নীতি মেনে এসব কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। টাকার বিনিময়ে এসব কলেজ অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদনের সময় থেকেই অসতৎ প্রক্রিয়া টাকা আয়ের পথে নেমেছে কলেজগুলো।