রবিবার (১০ জুন) রাত ৮টা। রাজধানীর ব্যস্ততম জায়গার মধ্যে অন্যতম ফার্মগেট এলাকা। দিনের কাজ শেষে নগরীর মানুষরা যখন ঘরে ফিরতে শুরু করে ঠিক অন্যদিকে এ এলাকায় কিছু মানুষ নামে অর্থ উপার্জনে। নগরীর আট দশটা মানুষের থেকে তাদের জীবন একটু আলাদা। কেউ বোরকা পড়ে কেউ বা মুখে নানা রঙের মেকাপ লাগিয়ে ঘরে ফেরা মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
ফার্মগেটের ফার্মভিউ মার্কেটের ঠিক উল্টোপাশে সন্ধ্যার পর থেকেই এমন চিত্র দেখা যায়। রাস্তার একমাথা থেকে অন্যমাথায় শুধুই তাদের হেঁটে চলা আর অপেক্ষায় থাকা। ঠিক একই চিত্র রাজধানী ঢাকার এক অনন্য স্থাপত্য জাতীয় সংসদ ভবনের খেঁজুর বাগান এলাকার। কিসের অপেক্ষা তাদের? কেনই বা রঙ মেখে নগরীর মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তারা? যারা জাদুর শহর এই ঢাকাতে প্রথমবারের মত ঘুরতে এসেছেন তাদের মনে এমনই কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে।
এরা যৌনকর্মী। ঈদকে সামনে রেখে এ মাসেই যেন আরও বেড়েছে প্রাচীন এই ব্যবসা। কিছুদিন আগেও যৌনকর্মীদের আনাগোনা কিছুটা কম ছিল। আর এখন সন্ধ্যা ঘনাতেই তাদের বিশাল জটলা দেখা যায় রাজধানীর বেশকিছু জায়গায়। সেখানে তারা খদ্দের জোগাড় করেন নানা কায়দায়।
আর তাই কৌতুহলী হয়ে তাদের কাছে যাওয়া। কাছে যেতেই একজন মুচকি হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলেন ‘কাজ করবেন’। উত্তরে- ‘কাজ না, শুধু একটু কথা বলবো।’ প্রথমে আপত্তি জানালেও ছবি ও ভিডিও না করার শর্তে সে রাজি হয়।
আসিফ আলমকে সে জানায়, নাম তার রোকসানা (ছদ্দনাম)। বাড়ি কল্যাণপুরে।
এ পেশায় কতদিন ধরে আছেন?
রোকসানা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, কেউ ইচ্ছে করে কি এই লাইনে আসে ভাই, আসে না। পরিবেশ আর আশেপাশের মানুষ বাধ্য করে। আমি প্রায় চারবছর ধরে এই লাইনে আছি। সারাদিন বাসায় থাকি আর সন্ধ্যায় এই জায়গায়।
পুলিশের কোনো ঝামেলা?
তেমন কোনো ঝামেলা নাই। আমরা প্রায় ২০- ২৫ জন সন্ধ্যার পর সংসদ ভবন এলাকাতে কাজের অপেক্ষায় থাকি। সবার মত ঈদতো আমাদেরও। তাছাড়া জীবনের তাগিদে এই ব্যবসা করছি। রোজার মাস খদ্দের কম। রোজকারো কম। তবে ঈদ এলেই কিছুটা বাড়ে।
প্রতিদিনের রোজকার কত?
কোনোদিন ১০০০ আবার কখনো ১৫০০। ঠিক নাই। যে যা দেয় তাই নেই। জোরের কিছু নাই। তবে এই লাইনে যাদের বয়স কম তাদের চাহিদা বেশি। ইনকামও বেশি।
ঈদ নিয়ে পরিকল্পনা কি?
ভাই বড়লোকদের মত আমাদের কি ঈদ আছে। খাইয়া বাইচ্ছা থাকাটাই এখন কঠিন। তবে ইচ্ছেতো করেই নিজের ছেলে মেয়েদের ও বাবা মাকে কিছু দিতে। কিন্তু কি করবো বলেন জীবনটা এভাবেই কাটতেসে।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাসমান এসব যৌনকর্মীদের মাঝে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। উগ্র সাজপোশাকে এদের দেখা যায়। সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে তাদের দেহ পসারীনির কাজ। সন্ধ্যা থেকে পুলিশ দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও রাত এগারোটার পর বেশ ব্যস্ত হন নিজেদের দায়িত্ব পালনে।
এই নগর বিড়ম্বনা বন্ধে পুলিশ কি করছে, তা জানতে চাইলে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোমিন বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। সামনে ঈদ তাই তাদের (যৌনকর্মী) বিচরণ কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপে জাতীয় সংসদ এলাকা ফিরে পেতে পারে সুন্দর পরিবেশ, এমনটাই মনে করেন সেখানের নিয়মিত ভ্রমণ পিয়াসী ও পথচারীরা। পাশাপাশি চাই, যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনে যথাযথ উদ্যোগ।