পতিতাকে গাড়িতে তুলেছিলেন- রাজধানীতে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে চলন্ত প্রাইভেটকারে ২২ বছর বয়সী তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী মাহামুদুল হক রনিকে (৩২) গণপিটুনি দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে শেরে বাংলা নগর থানার কলেজগেট সিগন্যাল (পূর্বাংশ) থেকে তাকে মদ্যপ অবস্থায় আটক করা হয়।
আজ রোববার সন্ধ্যায় শেরে বাংলা থানায় রনির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শ্লীলতাহানির শিকার ওই তরুণী। ব্যবসায়ী রনি ও তার প্রাইভেটকার শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রনি।
মাহমুদুল হক রনির ভাষ্যমতে, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় যাওয়ার জন্য ধানমন্ডির ঝিগাতলার বাসা থেকে গভীর রাতে নিজের গাড়ি নিয়ে বের হন। গাড়ির মধ্যে তিনি মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করায় একটু বেসামাল ছিলেন। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে তার গাড়িচালক সংসদ ভবনসংলগ্ন খেজুর বাগান এলাকা থেকে ‘দুই যৌনকর্মীকে’ গাড়িতে তোলেন।
রনির দাবি, গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ওই দুই তরুণীর মধ্যে একজনকে কলেজগেট এলাকায় নামিয়ে দিলে তিনি চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকারে পথচারীসহ সবাই এগিয়ে এসে গাড়িটি আটকায় এবং চালক ও রনিকে বেধড়ক মারধর করে।
গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাফি আহমেদ নামের একজন রনি হক ও তার গাড়িচালককে আটক করে মারধরের ভিডিও ও ঘটনার বিবরণসহ দুটি ভিডিওচিত্র ফেসবুকে পোস্ট করেন। তাতে মারধরের চোটে কাপড় ছিঁড়ে গেলে চালককে নগ্ন অবস্থায় দৌঁড়ে পালাতে দেখা যায়।
পরে অবশ্য সেই ভিডিও দুটি মুছে ফেলেন রাফি। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে ধর্ষণচেষ্টার শিকার তরুণীকে দেখা যায়। ২০-২২ বছরের চশমা পরা তরুণীর চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। তিনি ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছছিলেন। এই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাফি আহমেদ জানান, শনিবার মধ্যরাতে অফিস থেকে গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। কলেজগেট সিগন্যালে জ্যামে আটকা পরেন তিনি। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেটকারের (ঢাকা মেট্রো- গ ২৯-৫৪১৪) ভেতরে এক তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছিলেন রনি।
রাফি প্রথমে মনে করেছিলেন, গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা চলছে। পরে রাফিসহ সেখানে থাকা আরও কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে রনির প্রাইভেটকারটি আটকে ফেলেন। এ সময় তারা দেখতে পান গাড়ির পেছনের আসনে রনি এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করছেন। একপর্যায়ে জনতা গাড়ির ভেতর থেকে আক্রান্ত তরুণী, মদ্যপ রনি ও তার গাড়িচালককে বের করে আনেন।
ওই সময় তরুণী জানান, তাকে রাস্তা থেকে জোর করে গাড়িতে তুলে ধর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এরপর উত্তেজিত জনতা রনি ও তার গাড়িচালককে পিটুনি দেয়। রাত ৩টার দিকে রনিকে পুলিশে সোপর্দ করেন তারা। তবে এর আগেই পালিয়ে যায় রনির প্রাইভেটকারের চালক।
জানা গেছে, দুই সন্তানের বাবা মাহমুদুল হক রনির গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি ঢাকায় ধানমন্ডি-১৫ নম্বরের মিতালী রোডের একটি বাড়িতে থাকেন। বেসরকারি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এই সাবেক ছাত্র পেশায় ব্যবসায়ী।
শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস জানান, রনিকে আটক ও তার প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় রনির বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছেন ওই তরুণী।
রনিকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার মদ পানের নমুনা পাওয়া গেছে। যে দুই তরুণী তার গাড়িতে উঠেছিলেন তাদের এবং রনির গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র : আমাদের সময়