বিশ্বকাপ ফুটবল: আফ্রিকার দলগুলো কতদূর যাবে?

বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর সময় গণনা চলছে, একই সাথে চলছে নানা ধরণের বিশ্লেষণ।এবারের বিশ্বকাপে কোন আফ্রিকান দল কি প্রথম বারের মতো সেমি ফাইনালেও যেতে পারবে?

“যখন আমি আইভরি কোস্টকে কোচিং করানো শুরু করি তখন দিদিয়ের দ্রগবাকে বলেছিলাম যে আমাদের অনেক চমৎকার খেলোয়াড় আছে এবং বিশ্বকাপে আমরা অনেক দূর যেতে পারি। সে বলেছিলো : না, পারিনা”।এসভেন গোরাম এরিকসন দেখার চেষ্টা করেছিলেন যে কেন আফ্রিকা একটি বিশ্বকাপ জয়ের জন্য এতদিন অপেক্ষা করছে। যেখানে ২০০২ সালে পেলে বলেছিলেন যে বিশ বছরের মধ্যে এই মহাদেশের কেউ বিশ্বকাপ জয় করবে।
এরিকসন বলছেন, “কেন তারা পারছেনা? এক কথায়: অর্গানাইজেশন বা সংগঠন। আমি যখন যোগ দেই তখন ছিলো একেবারেই নৈরাজ্য”।

১৯৯৪ সালে গ্রুপ পর্বের খেলায় নিজ গ্রুপে শীর্ষস্থানে ছিলো নাইজেরিয়া। কিন্তু তারপরেও কোয়ার্টার ফাইনাল পার করার মতো দল এখনো তৈরি হয়নি।অথচ জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহাদেশে ফুটবল আছে রাজার আসনে।মিসর, মরক্কো, নাইজেরিয়া, সেনেগাল ও তিউনিসিয়া এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলছে।কিন্তু তারা ফাইনালের কাছে যাবে এটা বিশ্বাস করার মতো লোক খুব একটা বেশী নেই।

এ দলগুলোর কোনটিই ফিফা র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ ২০ এর মধ্যেই নেই।নাইজেরিয়ার সাবেক ফরোয়ার্ড পিটার ওডেমউইঙ্গির দাবী আফ্রিকার ফুটবলের মান আরও পিছিয়েছে।২০১০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি।তার মতে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া দলটি ছিলো সেরা আফ্রিকান স্কোয়াড। “ব্রাজিল আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ১৯৯৬ সালে অলিম্পিক জিতেছিলাম আমরা”।

১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুন, ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগাল ও ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানা কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি পৌঁছেছিলো।কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে মিসর ২৮ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো খেলছে আর ২০ বছর পর ফিরে এসেছে মরক্কো।মরক্কো দলটির অধিকাংশ খেলোয়াড়েরই জন্ম হয়েছে বিদেশে। ২৩ জনের মধ্যে ১৭ জনেরই জন্ম দেশের বাইরে।

বোনাস নিয়ে ঝামেলা এবং বয়কট
২০১৪ বিশ্বকাপের পর ক্যামেরুন, ঘানা ও নাইজেরিয়া শিরোনাম হয়েছে ভিন্ন কারণে।ঘানার খেলোয়াড়রা প্রশিক্ষণ বর্জন শুরু করে বেতন ভাতা সংক্রান্ত ঝামেলার কারণে।আর ক্যামেরুনের খেলোয়াড়রা দেরীতে পৌঁছায় বোনাস নিয়ে সংকটের জন্য।

তিউনিসিয়া দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা রাধি জাইদি বলেন, “ইউরোপ থেকে নিজ দেশের জন্য খেলতে আসা খেলোয়াড়রা ক্লাব থেকে সময়মত টাকা পয়সা ও বোনাস পায়। কিন্তু এটিই ভিন্ন হয় তারা যখন দেশের জন্য খেলতে আসে”।

এটি আফ্রিকা, এটি এমনই
২০১০ সালের বিশ্বকাপে আইভরি কোস্টের দায়িত্বে ছিলেন এরিকসন।”আমরা প্রীতি ম্যাচ খেলেছিলাম সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ড্রেসিং রুমে গিয়ে দেখি আমাদের কোন জার্সি নেই, অন্য উপকরণ নেই। খেলা শুরুর তখন মাত্রা সোয়া এক ঘণ্টা বাকী ছিলো”।”ওয়ার্ম আপে নামার আগে একজন খেলোয়াড় এসে আমার কাছে আসে এবং বলে যে সে খেলবেনা। জিজ্ঞেস করলাম তুমি ইনজুরড? সে বললো না কিটম্যান আমার বুট আনতে ভুলে গেছে”।
“দ্রগবাই তখন বলেছিলো যে এসভেন, এটাই আফ্রিকা”।

স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ম্যানেজার সংকট
রাশিয়া বিশ্বকাপে আসার জন্য মোট ৪৪টি দল নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে কিন্তু এর মধ্যে ত্রিশটিরই ম্যানেজার নন-আফ্রিকান।সাত বার বিশ্বকাপে খেলা ক্যামেরুন চারবার ফরাসী, দুবার জার্মান ও একবার রাশিয়ান ম্যানেজার বা কোচের নেতৃত্বে ছিলো।এবার রাশিয়ায় মিসর, মরক্কো ও নাইজেরিয়া এসেছে যথাক্রমে আর্জেন্টাইন, ফরাসী ও জার্মান কোচের তত্ত্বাবধানে।

টানেলের শেষ প্রান্তে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে?
মরক্কো চেষ্টা করছে বিশ্বকাপের আয়োজক হতে।২০২৬ সালের ৪৮ দলের বিশ্বকাপের আয়োজনের দৌড়ে আছে কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রও।ক্যামেরুনের ডিফেন্ডার ছিলেন গায়েতান বং। তিনি বলেন আফ্রিকায় একেবারে মৌলিক প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলোর উন্নতি দরকার।”অনেক সময় আপনি মাঠের কারণেই খেলতে পারবেননা। অনেক মেধাবী খেলোয়াড় আছে কিন্তু শক্তিশালী কোন লীগ নেই”।

কিন্তু এরিকসন আশা করেন একদিন বিশ্বকাপ জিতবে আফ্রিকা।”আমি জানিনা কখন কিন্তু আমি মনে করি আফ্রিকা জিতবে। হয়তো পরে। কিন্তু হবে কারণ ফুটবল নিয়ে এখানে ব্যাপক উৎসাহ আছে”।