১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করার পরও সরকারের চলতি মেয়াদের শেষবেলায় এসে হঠাৎ লোডশেডিংয়ের কবলে বাংলাদেশ। খোদ রাজধানীতেই বিভিন্ন এলাকায় দিনে তিন থেকে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ। যদিও বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবের খাতায় দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। তবে গ্রাহকরা বলছেন ভিন্ন কথা। রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোও রমজান উপলক্ষে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শিডিউল তৈরি করে দিয়েছে। আর সেখানে এক দিন পরপর প্রতিটি এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং রাখা হয়েছে। এদিকে বিদ্যুতের দাবিতে ফের দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তাজপুর বাজারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী এ অবরোধে মহাসড়কের উভয় দিকে কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিন রাজধানীতেও বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। তবে পিডিবির হিসাবে ৯ জুন দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং ছিল না। প্রতিষ্ঠানটির নথিপত্রে দেখানো হয়েছে এদিন সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৫৯২ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ২৪৯ মেগাওয়াট। উপকেন্দ্র পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৯২ মেগাওয়াট। লোডশেডিং শূন্য। তবে গ্রাহকরা বলছেন, দিনের মধ্যে একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এমনকি সাহরি ও ইফতারের সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে। আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মর্তুজা নূর জানান, রাজশাহীতে কোনো কোনো দিন ছয়-সাতবারও লোডশেডিং হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার বিদ্যুৎ গেলে দেড়-দুই ঘণ্টায়ও দেখা মেলে না। গত এক সপ্তাহে বিদ্যুতের লুকোচুরি বেড়েছে। এদিকে রাজধানীর বারিধারা এলাকার বাসিন্দা পার্থ প্রতিম বালা বলেন, অনেক দিন ভালো ছিলাম। লোডশেডিং তেমন টের পাইনি। মাঝে-মধ্যে বিদ্যুৎ গেলেও ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে চলে আসত। হঠাৎ কিছুদিন ধরে দিনে তিন-চারবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। ঘণ্টা পার হওয়ার আগে আসছে না। এদিকে ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) রমজানের শুরুতেই লোডশেডিংয়ের শিডিউল তৈরি করে দিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, রমজানে রবি, মঙ্গল ও বুধবার মিরপুর জোন ও উত্তরা জোনের বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং রাখা হয়েছে। শনি, সোম ও বুধবার রাখা হয়েছে গুলশান জোনের বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং। শিডিউলে দেখা গেছে শুধু দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মিরপুর জোনের ৩৮ এলাকায় এক ঘণ্টা করে, উত্তরা জোনের ৪২ এলাকায় এক ঘণ্টা করে ও গুলশান জোনের ৪৫ এলাকায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং রাখা হয়েছে। একইভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) এলাকায়। পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় মানুষ বিদ্যুতের জন্য বিক্ষোভ করছে। তবে পিডিবির হিসাবের খাতায় গত এক মাসেও দেশে কোনো লোডশেডিং হয়নি। তাদের হিসাবে দৈনিক বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা কম-বেশি ১২ হাজার মেগাওয়াট। ৬৬০ মেগাওয়াট আমদানিসহ উৎপাদন ক্ষমতা আছে ১৫ হাজার ১০ মেগাওয়াট।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সরকারের ওপর মহল থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস সংকটে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। মোট ১২৭০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়েকটি কেন্দ্র সংস্কারে আছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না। পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, লোড ব্যবস্থাপনার কারণে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। তবে উৎপাদনের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। শিগগিরই সংস্কারে থাকা কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে। আরও কিছু নতুন কেন্দ্রের কাজ শেষের পথে।
- ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ১০ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ