দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুর ফিতর। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর জামদানী পল্লী এখন কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। জামদানী পল্লীর মালিক এবং শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ।
এই পল্লীতে তৈরী হচ্ছে আধুনিক রুচিশীল জামদানী কাপড়। বর্ণিল সুতা দিয়ে তৈরী হচ্ছে সুন্দর জামদানী শাড়ি। শাড়ির মাঝে বাহারি রঙ্গের সুতা দিয়ে তৈরি কারুকাজ দেখলে সত্যিই কোন শিল্পীর আপন হাতের রং তুলির আঁচড় বলে মনে হয়। চমৎকার শিল্প খচিত এখানকার জামদানী শাড়ির স্থান হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের অভিজাত বিপণী বিতানগুলোতে। মনোমুগ্ধকর এ শাড়ির জনপ্রিয়তা উর্ধ্বমূখী থাকায় ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কারখানার মালিকরা। আর তাই চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তৈরী করতে রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শ্রমিকরাও। এ জন্য মালিক শ্রমিকের কোলাহলে সরব হয়ে উঠেছে জামদানী পল্লী।
সরেজমিনে জামদানী পল্লী পরিদর্শন করলে কাপড় তৈরীর মেশিনের ঝুম ঝুম শব্দ বলে দিচ্ছে বাজারে কাপড়ে চাহিদা এবং শ্রমিকদের ব্যস্ততার কথা।এখন জামদানীর চাহিদা বেশি থাকায় মহিলাদেরকেও ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে ।
জামদানী শিল্পীরা জানান, সুতার গুণগতমান এবং ডিজাইনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের শাড়ি তৈরী হয়। এক সঙ্গে দুইজন শ্রমিকের একটি শাড়ি তৈরী করতে সময় লাগে ১৫ দিন হতে এক মাস পর্যন্ত। যেখানে প্রতিটি শাড়ির মূল্য ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালে দৌলতপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম সর্বপ্রথম নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ হতে জামদানি শাড়ির কাজ শিখে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে দৌলতপুরে একটি তাঁত দিয়ে জামদানী শাড়ি তৈরীর কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে চাহিদা এবং লাভ দেখে পরিবারের সদস্যদেরকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করেন। যা দেখে গ্রামের লোকজন উৎসাহী হয়ে ধীরে ধীরে জামদানী শাড়ি তৈরীকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত বাঙ্গালীর প্রতিটি উৎসবে চাহিদার আলোকে মনোহরদীর জামদানী শাড়ি অবদান রেখে আসছে। জামদানী শ্রমিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে বলে এ পেশায় তারা অনেক স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
জামদানী শিল্পী কামাল হোসেন বলেন, প্রত্যেক ঈদসহ সকল উৎসবে আমাদের এ এলাকার জামদানী শাড়ির চাহিদা অনেক। তাই সকল উৎসবের আগে আমাদেরকে চাহিদার আলোকে কাজ দেওয়া জন্য পরিশ্রম করতে হয় দিন রাত। আর এ সময় আমাদের উপার্জনও হয় অন্য সময়ের চেয়ে বেশি বলে মনের আনন্দে সবাই কাজে ব্যস্ত থাকি।
জামদানী শ্রমিক ফারুক বলেন, নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করা যায় বলে এ পেশায় অনেকর আগ্রহ আছে।
এলাকার বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকার যদি স্বল্প সূদে ঋণ প্রদান করে তবে এ শিল্পকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।