মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হরভজন সিং

ক্রিকেটার হরভজন সিংয়ের বোলিং যারা দেখেছেন, তারা একবাক্যে মেনে নেবেন বোলার হিসেবে তিনি এক দুরন্ত প্রতিভা ছিলেন। বয়সের ভারে আজ জাতীয় দলের বাইরে চলে গেলেও রেকর্ডের বিচারে তিনি সর্বকালের সেরা অফস্পিনার ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের।

আইপিএল ক্রিকেটের সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যান। এই টুর্নামেন্টে হরভজন সিংয়ের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারকে তুলনায় কমবয়সী সাস্থাকুমারণ শ্রীসন্থকে মাত্রারিক্ত আনন্দের বহিঃপ্রকাশের জন্য চড় মারতেও দেখা গিয়েছে মাথা গরম করে। কিন্তু, মানবদরদী, বন্ধুঅন্ত প্রাণ ভাজ্জির মাঠের বাইরের স্বরূপটা লুকনোই ছিল এতদিন। এবার সেটাই বাইরে এলো।

হরমন ও হরভজন সিং দু’জনে যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন তখন ১৯৯০ সাল। ১৯৯৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় ভাজ্জির। আর হরমনের ক্যারিরিয়ার অন্য দিকে মোড় নেয়। মাঝে আটাশটা বছর পেরিয়ে গেলেও কৈশোরের বন্ধুর কথা ভোলেননি সফল ক্রিকেটার হরভজন সিং। সেই হরমন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন। অন্ত্রে ফিসচুলা হয়েছিল তার। ভাজ্জি ঠিক সময়ে জানতে না পারলে নিশ্চিত মৃত্যু অপেক্ষা করছিল তার জন্য।

বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটেই ক্যারিয়ার সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়া হরমন একদিন ফোন করেছিলেন হরভজনকে। তাকে নিজের শারীরিক অবস্থার কথা জানান। পর্যাপ্ত অর্থ না পেলে জীবনের বাতি আর ক’দিন পরই নিশ্চিত নিবে জাবে। কথাটা শোনামাত্র দ্বিতীয় কোনো ভাবনা মাথায় আসেনি হরভজনের।

হরভজনের মুখেই এর পরেরটা শোনা যাক, ‘ও (হরমন) কোনোভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমাকে ওর অবস্থার কথা বলে। জানায়, কি অবস্থার মধ্যে দিয়ে আছে ও।’

একটি ভারতীয় ইংরেজি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের হয়ে শতাধিক টেস্ট খেলা ভাজ্জি আরও বলেন, ‘টাকার খুব দরকার ছিল ওর। আমি ওকে বলি, অস্ত্রোপচারের বন্দোবস্ত করতে। চিকিৎসার সমস্ত খরচ আমি দেখে নেব বলে ওকে আশ্বস্ত করি। কারণ, একজন মানুষের জীবনের চেয়ে আর কোনো কিছুই দামি নয়।’

এদিকে, ভাজ্জির কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস পেয়ে হরমনের পরিবার এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। অবশেষে নাংলোইয়ের রাঠী হাসপাতালে এসে দৌড় থামে। আর সেখানে অস্ত্রোপচার হয় তার।

জানা গিয়েছে, হরমনের অস্ত্রোপচারের আগে ডাক্তারের সঙ্গে ভাজ্জি নিজে কথা বলেছিলেন ফোন করে এবং চিকিৎসার সমস্ত খরচ তিনি বহন করেন।

বন্ধু হরভজন যে মানবতা দেখিয়েছেন, তার জন্য হরমন কৃতজ্ঞ। বলছেন, ‘আমি সারা জীবন ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। বন্ধুত্বের আসল মানে কি, ও প্রমাণ করে দিয়েছে। আমার কাছে চিকিৎসার জন্য একটা কানাকড়িও ছিল না আর। গত একবছরে এই রোগের পিছনে সমস্ত জমানো অর্থ খরচ হয়ে যায়। এই অবস্থায় হরভজন দেবদূতের মতো হাজির হয়ে আমাকে মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে উদ্ধার করল।’

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত আরোগ্যের পথে এখন হরমন।