প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা মাদকমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশের মানুষের শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে শান্তিপ্রিয়। সেভাবেই দেশকে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে। গতকাল বুধবার বিকালে গণভবনে আইনজীবীদের সম্মানে প্রধানমন্ত্রীর ইফতার পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন জেলা বার সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের বিজয়ী হওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে আইনজীবী সমিতিতে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। বিজয়ের এ ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো অবস্থা মোকাবিলা করা এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে বিজয়ী হওয়া কঠিন কোনো কাজ না। কারণ এ আওয়ামী লীগ সংগঠন তৈরি করেছেন আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাতে গড়া সংগঠন, এ সংগঠন নিয়েই তিনি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারে যারা পূর্ণ বিজয় লাভ করেছেন, তাদের আমি অভিনন্দন জানাই। আর যারা আংশিক জয়লাভ করেছেন, তাদেরও আমি অভিনন্দন জানাই। যারা পূর্ণ প্যানেলে বিজয় লাভ করেছেন, তাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, আগামীতে যেন সমানভাবে জিতে আসতে পারেন, সে লক্ষ্যেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। আর যারা খণ্ডিত আকারে জয়লাভ করেছেন, আগামীতে যেন পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হতে পারেন, সেলক্ষ্যে কাজ করে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিতে হবে।
জি-৭ এ যোগ দিতে আজ বৃহস্পতিবার কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সাতটি ধনী দেশ যাকে গ্রুপ সেভেন বলে। সেই দেশের নেতারা আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের ম্যাজিকটি জানতে চান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের শুধু আশ্রয়ই দেইনি, তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। এতে সমগ্র আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের হাতকে শক্তিশালী করেছে। সারা বিশ্ব অতীতে কখনোই বাংলাদেশের পাশে এমনভাবে দাঁড়ায়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক দেশের সমর্থন পেয়েছিলাম, অনেকের পাইনি। কিন্তু এখন সবাই সমর্থন দিয়েছেন। আমি দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরবো। রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরবো। বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে, তখন মানুষের উপর অত্যাচার হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের উপর নির্যাতন করা হয়। সারাদেশে একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনী যেমন অত্যাচার করেছিল, সেরকম অত্যাচার করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর। রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। বন্ধ করেছিলেন মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়া। আমরা আবার যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছি। স্বজন হারারা ন্যায় বিচার পেয়েছে, তাদের অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে আমরা বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতির পিতার হত্যার বিচার করে বাংলাদেশকে অভিশাপমুক্ত করেছি। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার চলছে। সে বিচারও হবে। বাংলাদেশে কোনো অন্যায় অবিচার থাকবে না।
ইফতারের আগে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত আইনজীবী সমিতির নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম, সাবেক বিচারপতি মেসবাহ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, ঢাকা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, গাজীপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, দিনাজপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, শরিয়তপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন ও লালমনিরহাট জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কর্মকর্তাগণ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ইফতারের আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন টেবিল ঘুরে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন।