ভূমি অফিসের কর্মকর্তার মাসিক আয় ৩০ লাখ টাকা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি করে কয়েক বছরে তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নায়েব আব্দুল জলিল ভূমি সচিবের আত্মীয় ও নারায়ণগঞ্জ জেলার এলএ শাখার এক কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ান। তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি), সার্ভেয়ারসহ কাউকে পরোয়া করেন না। গত কয়েক বছরে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় তাঁর রয়েছে ছয়তলা আলিশান বাড়ি। আর শরীয়তপুরে নিজের এলাকায় রয়েছে দোতলা বাড়ি ও কয়েক বিঘা জমি। তিনি প্রাইভেট কার হাঁকিয়ে চলেন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানায়, গোলাকান্দাইল ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুল জলিল জমির নামজারি, ‘খ’ তফসিলসহ বিভিন্ন কাজে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। তাঁকে ১ শতাংশ জমি নামজারিতে দিতে হয় তিন হাজার টাকা। সাধারণ নামজারিতে ১ শতাংশ জমিতে তাঁকে দিতে হয় ৫০০ টাকা। আর মিস কেস তদন্তে প্রতিবেদন পক্ষে নিতে গুনতে হয় ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। এ টাকা জলিল ও তাঁর সহকারী সোলায়মান ভাগাভাগি করে নেন। এভাবে জলিলের মাসিক আয় ৩০ লাখ টাকার মতো।

গতকাল সোমবার সকালে ভূমি অফিসের সামনে কথা হয় ভুক্তভোগী মকবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “ভাই, একটা ১০ শতাংশের ‘খ’ তফসিলের কাম লইয়া আইছিলাম নায়েব জলিলের কাছে। উনি আমার কাছে শতাংশ হিসাবে ৫০ হাজার টেকা চান। ১০ হাজার টেকা দেওনের কথা কইছিলাম। এইডা হুইনা ওনায় আমারে বকাঝকা দিয়া বাইর কইরা দিছেন।”

ষাটোর্ধ্ব মনির হোসেন এসেছেন গোলাকান্দাইলের নাগেরবাগ এলাকা থেকে। সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করতেই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এই দেশে কি আইন-কানুন নাই! একটা মিস কেইসের রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দেওয়ার লেইগ্যা জলিল স্যার চাইলেন এক লাখ টেকা। আমার কাগজপত্র হগল ঠিক আছে। হের পরেও হেরে (জলিল) কইছি, ২০ হাজার টেকা দিমু, বাবা আমার কামডা কইরা দেন। বাজান, সরকাররে জানাইবেন ওনারে (জলিল) যেন এহান থেইক্যা সরাইয়া নেয়।’

নাগেরবাগ থেকে আসা রজ্জব আলী মিয়া বলেন, ‘আমি একটা খারিজের কাম লইয়া আইছিলাম জলিল স্যারের কাছে। কাগজপত্র ঠিক আছে। হেয় দাবি করলেন ১৫ হাজার টেকা। আমি পাঁচ হাজার দেওনের লেইগ্যা স্বীকার করছি। এতে ওনায় রাজি না। জমিন পইড়া থাক। লস তো আর নাই।’ তাঁদের মতো আরো অনেকে নায়েব জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। ভুক্তভোগীরা বলেছে, নায়েব জলিলকে অপসারণ করা না হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দেওয়া হবে।

আব্দুল জলিল সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘যদি অন্য কেউ (টাকা) নিয়ে থাকে, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আর আমাকে যদি কেউ ইচ্ছা করে দেয় (টাকা) তখন তো নিতে হয়।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। সব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া আছে যেন সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবে তাঁরা কাজ করেন।’