ছাত্রলীগ নেতার সাথে- আপত্তিকর অবস্থায় গত শনিবার লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হোসেন বিপ্লবকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেছিল স্থানীয় এলাকাবাসী। একই সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে পুলিশে দেয়া হয়। এ ঘটনা ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। শুরু হয় আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
তবে তাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী আবদুল জাহের ও তার স্ত্রী। ঘটনার পর তারা এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এমন দাবি করেন।
ওই ভিডিওতে ব্যবসায়ী আবদুল জাহের ও তার স্ত্রী জানান, ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব তাদের আত্মীয়। ঘটনার দিন বিপ্লব একটি বিশেষ প্রয়োজনে তাদের বাড়ি এলে স্থানীয় কিছু লোকজন ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ঘরে ঢুকে তাদের আটক করে। এসময় তারা দুইজনের পরনের জামা কাপড় ধরে টেনে ছিড়ে ফেলে এবং তাদের জোর করে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারন করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।
ওই ব্যবসায়ী ভিডিওতে জানান, স্থানীয় আলাউদ্দিন চৌকিদার অনেকদিন ধরে তার স্ত্রীকে মোবাইলে উত্যক্ত করত। বিভিন্ন সময় আলাউদ্দিন চৌকিদার তার স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দিত। কু-প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে তাদের ফাঁসানোর জন্য আলাউদ্দিন চৌকিদার ও তার লোকজন ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এছাড়া ভিডিওটিতে ওই দিনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দিয়েছে ব্যবসায়ী স্ত্রী। প্রায় ৯ মিনিটের ভিডিওটি পাঠকদের জন্য এ সংবাদের একেবারে নিচে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরউভূতির চকবাজার এলাকার আবদুল জাহেরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গনধোলাইয়ের শিকার ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হোসেন বিপ্লব কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে চরউভূতির চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ী (আবদুল জাহেরের) স্ত্রীর সাথে ছাত্রলীগ নেতার রাকিব হোসেন বিপ্লব অবৈধ সর্ম্পক চলে আসছিল। এসব অপকর্মের বিষয়ে স্থানীয়রা জেনেও রাকিব হোসেন বিপ্লবের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
শনিবার রাতে তারাবির নামাজ পড়তে লোকজন মসজিদের দিকে চলে গেলে এ সুযোগে রাকিব হোসেন বিপ্লব ঘরে ডুকে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রীর সাথে অপকর্ম লিপ্ত হয়। এ খবর পেয়ে মুসল্লিরা নামাজ শেষ করে একত্রিত হয়ে ওই ব্যবসায়ীর ঘর ঘেরাও করে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হোসেন বিপ্লব ও নারীকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে।
পরে গণধোলাই দিয়ে বিপ্লব ও ওই নারীকে পুলিশে সোর্পদ করে। অভিযোগ রয়েছে, রাকিব হোসেন বিপ্লব ছাত্রলীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে তোরাবগঞ্জ বাজারে তার বাসায় ভাড়া থাকত টেইলার্স ব্যবসায়ী আবদুল জাহের ও স্ত্রী এবং তার দুই সন্তান।
এরপর থেকে ব্যবসায়ীর স্ত্রীর সাথে রাকিব হোসেন বিপ্লবের অবৈধ সর্ম্পক গড়ে উঠে। এসব বিষয়ে জানাজানির পর তার বাসা ছেড়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু এ বাড়িতেও প্রায়ই আসা-যাওয়া করত বিপ্লব। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন হুমকি-ধুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে সে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতে না বলে জানান অনেকে।
এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভবানীগঞ্জ ইউনয়ন পরিষদের ৪নং চরউভূতি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. নাছির উদ্দিন জানান, স্থানীয় এক/দেড়শ লোক রাকিব হোসেন বিপ্লব ও ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে আপত্তির অবস্থায় আটক করে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে দুইজনকে থানায় নিয়ে যায়।
কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জানান, রাকিব হোসেন বিপ্লব কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপরাধ করলে তার দায়িত্ব উপজেলা ছাত্রলীগ নিবেনা। তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. ফয়সাল আহমদ রতন জানান, রাকিব হোসেন বিপ্লব সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
বর্তমানে সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। এ ঘটনার খবর শুনেছি। তবে বাস্তবতা কি? সেটা আমি জানিনা। যেহেতু ছাত্রলীগের রাজনীতি করার কারণে ঘটনাটি ষড়যন্ত্রও হতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রাকিব হোসেন বিপ্লব ও ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।