মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে দেশের বাইরে গিয়ে এবার বিতর্কের মুখে পড়লেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এক অনুষ্ঠানে প্রবাসী এক ফিলিপাইনের নারী শ্রমিককে চুমু খেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন দুতার্তে।
বিবিসি ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, গতকাল রোববার দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত নিজ দেশের শ্রমিকদের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। অনুষ্ঠানের দেওয়া বক্তব্য শেষে এক নারীকে মঞ্চে ডেকে নেন দুতার্তে। এরপর তাঁকে চুমু দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করেন। এমন দৃশ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন উল্লাস প্রকাশ করলেও তিনি বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আলোচনা চলছে রদ্রিগো দুতার্তের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে।
সিউলে প্রবাসী ফিলিপিনো শ্রমিকদের সংগঠন ওএফডব্লিউ ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে ওই বিতর্কিত ঘটনাকে ‘একজন নারীবিদ্বেষী প্রেসিডেন্টের বিরক্তিকর নাটক’ বলে বর্ণনা করেছে ফিলিপাইনের অধিকার আন্দোলনকারী নারীরা।
অনুষ্ঠানে একটি বইয়ের ফ্রি কপি নেওয়ার জন্য দুই ফিলিপিনো নারীকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান দুতার্তে। ওই দুই নারী মঞ্চে দুতার্তের পাশে দাঁড়াতে পেরে তাদের অত্যন্ত আনন্দিত দেখাচ্ছিল। এদের মধ্যে প্রথমজনকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু দেন দুতার্তে, এরপর দ্বিতীয় নারীর ঠোঁটে চুমু দেওয়ার জন্য ইঙ্গিত করেন। প্রেসিডেন্টের এমন ইশারায় ওই নারী নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসতে থাকেন এবং অস্বস্তিতে পড়েন। এ সময় প্রেসিডেন্ট তাঁকে আবারও একই ইঙ্গিত করেন এবং শেষে কিছুটা সামনে ঝুঁকে ওই নারীর ঠোঁটে চুমু দেন।
সরাসরি প্রচারিত হওয়ায় রদ্রিগো দুতার্তের এই কর্মকাণ্ডে ইন্টারনেটে অনেকেই নানা সমালোচনামূলক মন্তব্য করছিলেন। এর আগেও নারীদের সঙ্গে অসংগত আচরণের কারণে অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন দুতার্তে।
ফিলিপাইনের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে সিএননের খবরে বলা হয়, অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ওই নারীকে বলেন, তুমি কি একা (অবিবাহিত)? তুমি কি তোমার স্বামীর কাছ থেকে আলাদা থাকো? তুমি তাকে বলো যে এটা শুধুই একটা জোক।
দুই সন্তানের এই জননীর নাম বি কিম। দক্ষিণ কোরিয়ার এক নাগরিককে তিনি বিয়ে করেছেন।
ফিলিপাইন থেকে শারমানি কুইনতো নামের একজন টুইটারে লেখেন, ‘ওএফডব্লিউ থেকে যে চুমুটি ‘চাইলেন’ দুতার্তে? তা হয়রানির নমুনা। মূলত তিনি তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রভাব খাটিয়ে ওই নারীর কাছ থেকে সম্মতি আদায় করে নিলেন।’
কাইলি ইউনাইস নামের আরেকজনের টুইট, ‘বিদেশে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে একজনের সঙ্গে এমন কাজ করা অত্যন্ত অনৈতিক; যতক্ষণ তাঁর ব্যক্তিগত কার্যসিদ্ধি হয় ততক্ষণ নৈতিক ও অনৈতিকতার মধ্যে, সৎ ও অসতের মধ্যে ব্যবধান দুতার্তের কাছে অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। গুডলাক, পিএইচ।’
দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় একজন আরজে এবং সাংবাদিক বারাতে ফেসবুকে দুতার্তের এমন কাজের জন্য কঠোর সমালোচনা করে লেখেন, ‘ক্ষমতায় আছেন বলেই কি এমন কিছু? ওই নারীকে দোষ দেবেন না। এই লোকটি চরম বিরক্তির। আপনার ভিডিওটি দেখলেই বুঝবেন প্রেসিডেন্ট ওই নারীকে প্রভাবিত করেছেন। এটা ওই নারীর জন্য অস্বস্তির। ক্ষমতার খেল এখানেই। একজন প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিক কোনো অনুষ্ঠানে এমন কিছু করতে পারেন না।’
প্রায় দুই বছর আগে ফিলিপাইনের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। তাঁর এই যুদ্ধ ছিল অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধের নিহত মানুষের সঠিক সংখ্যা পুলিশ জানে না। সন্দেহভাজন মাদকসেবী ও বিক্রেতার লাশ অন্ধকারে, ব্রিজের নিচে ও ময়লার স্তূপে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেক সময় নিহত ব্যক্তির গলায় কার্ডবোর্ডে লেখা থাকে, ‘আমি একজন মাতাল। আমাকে পছন্দ করবেন না।’ ফিলিপাইনের মাদকযুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। মানবাধিকারগোষ্ঠী, সংবাদমাধ্যম ও পুলিশের নিহত মানুষের সংখ্যা নিয়ে পৃথক পরিসংখ্যান রয়েছে। সরকার নিজেই জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে মাদক-সংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৩৫৫টি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে এবং ৩ হাজার ৯৬৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে পুলিশি অভিযানে। দুতার্তের এই কাজের ব্যাপক সমালোচনা দেশজুড়ে।