মুসলমানদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ মক্কা নগরীর পবিত্র স্থানগুলোর উন্নয়নের দিকে বাড়তি নজর দিচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ বলেছেন, হজ ও ওমরাহ পালনকারীসহ দর্শনার্থীদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখার ব্যাপারে।
এছাড়া তারা যেন স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের ধর্মীয় কাজগুলো পালন করতে পারেন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান মক্কা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে কড়াভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, পবিত্র স্থানগুলোর উন্নয়নের ব্যাপারে। জানা গেছে, কাবা শরীফের উন্নয়নের দিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কাবা শরীফ ও তার আশেপাশের উন্নয়নে কয়েক বিলিয়ন রিয়াল লগ্নি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিল যৌন হয়রানি বন্ধে একটি খসড়া আইনের অনুমোদন দিয়েছে।নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে আর মাত্র এক মাসেরও কম সময় আছে। খসড়া এ আইনে যৌন হয়রানির শাস্তি হিসেবে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৩ লাখ রিয়াল অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের উপস্থিতিতে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা ওই আইন পাস করেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে শুরা কাউন্সিলের সদস্য লতিফা আল-শালান বলেন, সৌদি রাজশাসনে আইন প্রণয়নের ইতিহাসে নতুন এই খসড়া বিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন। এটি আইনের ক্ষেত্রে একটি বড় শূন্যস্থান পূরণ করলো। এই আইনের ফলে যৌন হয়রানি বন্ধ করা সহজ হবে এবং সবার ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব হবে
আগামী ২৪ জুন গাড়ি চালানোর বিষয়ে নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আর এটা সম্ভব হচ্ছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি সৌদিজুড়ে যে সংস্কার চালাচ্ছেন সেটির কারণে। যুবরাজ মোহাম্মদ নিজেকে ‘প্রগতিশীল সংস্কারক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
সম্প্রতি ৩৫ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর সৌদি আরবে সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এই যুবরাজ। এমনকি কনসার্টে নারী-পুরুষের একসঙ্গে অংশগ্রহণের বিষয়টিও অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতাও খর্ব করেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ।
এসব সংস্কারের মধ্যেও সৌদি আরবে নারী অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এই ব্যাপারে নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রতনা বেগম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার যে, সৌদি আরবে বিশিষ্ট নারী অধিকারকর্মীদের আটকে রাখা হচ্ছে। নারীরা যে গাড়ি চালাতে পারবে, সেটা যে নারীদের দীর্ঘ সময়ের আন্দোলনের ফসল; সেই নারীদেরই দেশটিতে আটকে রাখার মতো ঘটনা ঘটেছে। এর চেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে?
জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে সৌদি আরবকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ডজনখানেক নারী অধিকারকর্মীদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য প্রদানের ব্যাপারে। যে নারীরা বেশ কয়েক বছর ধরে নারীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার রয়েছেন, তাদেরকে চলতি মাসে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে যেন সঠিক তথ্য দেয়া হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকেও ওই নারী অধিকারকর্মীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এদিকে ওই নারীদের আটকের তথ্য গত সপ্তাহে প্রকাশ করেছে রিয়াদ। সরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছে, ওই নারীরা বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা সৌদি আরবের শৃঙ্খলা নষ্টের জন্য বিদেশি গোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থও নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
অন্যদিকে সৌদি আরবের এক রাজকন্যার হাত ধরে এবার ফ্যাশন জগতে পা দিয়েছে দেশটির নারীরা। যুবরাজ সালমানের সংস্কারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শুরুতে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও থিয়েটারে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখার অনুমতি দানের পরই প্রিন্স সালমান এবার নারীদের ফ্যাশন জগতে নিয়ে এসেছেন।
প্রিন্স সালমানের হাত ধরে সৌদি রাজকন্যা নওরা বিনতে ফয়সাল আল সৌদের নেতৃত্বে দেশটিতে যাত্রা করেছে জনপ্রিয় শো ফ্যাশন শো। ৩০ বছর বয়সী রাজকন্যা নওরা গত ডিসেম্বরে আরব ফ্যাশন কাউন্সিলের অনারারি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। এরপর গত মাসে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো ‘আরব ফ্যাশন উইক’ আয়োজন করা হয়। সেই আয়োজনে ভালোভাবেই যুক্ত ছিলেন রাজকন্যা নওরা।
আয়োজনের সঙ্গে রাজকন্যা নওরা জড়িত থাকলেও নানা কারণে ‘আরব ফ্যাশন উইক’ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই সপ্তাহ দেরিতে। সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন বলে অনেকের নজর ছিল এই ফ্যাশনের দিকে। কিন্তু এই আয়োজন প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল। শুধু আমন্ত্রিত নারীরাই সেখানে উপস্থিত থাকতে পেরেছিলেন। অনুষ্ঠানে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। আরব ফ্যাশন কাউন্সিল অবশ্য ওই অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছে। সৌদি আরবের বিনোদন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ওই অনুষ্ঠানের কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
এগুলো সম্ভব হচ্ছে ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেওয়া সংস্কারের উদ্যোগে। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ গত বছরের জুনে তাঁর ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে দিয়ে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে উত্তরসূরি নিযুক্ত করেন। এরপর থেকেই দেশটিতে শুরু হয় একের পর এক সংস্কার কার্যক্রম।
গত বছরই মক্কার গণ পরিবহণ খাতে তিন দশমিক দুই মিলিয়ন রিয়ালের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মক্কা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট প্রিন্স খালিদ আল ফয়সাল।