সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার ও জেল খেটে বাংলাদেশি নারীদের দেশে ফেরা অব্যাহত রয়েছে। রোববার দিনগত রাতেও হতাশার চেহারা ও গরম লোহার চ্যাকাসহ নানা ধরনের জখমের চিহ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৩০ জন বাংলাদেশি নারী।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ফিরে আসা নারীরা বিমানবন্দরে নেমে শুকরিয়া আদায় করেন। তারা বলেন, মনে হচ্ছে দোযখ থেকে মুক্তি পেলাম। দেশে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। দেশে ফেরা নার্গিস আক্তার কথা বললেও বাকিরা কথা বলতে রাজি হননি প্রথমে।
এর কারণ হিসেবে ভিড়ের মধ্য থেকে একজন জানান, নির্যাতিত হওয়ার কথা জানতে পারলে পরিবারের সদস্যরা ঘরে উঠতে দেবে না। এরপর অনেকটা সমস্বরে অনেকে আর্তনাদ করে উঠেন, সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিক পাঠানো বন্ধ করুন, দয়া করে।
কুমিল্লার শেলী বলেন, তিন মাস আগে দালাল মইনের মিষ্টি কথা শুনে সৌদি যাই। এটাই ছিল জীবনেন বড় ভুল। সৌদি অত্যাচারী মালিকের কথা সব বলতে পারব না। শুধু এতটুকুন বলব, সে মানুষ নামে জানোয়ার।
তিনি আরও বলেন, বাসার কাজের কথা বলে নিলেও তাদের মতলব ছিল ভিন্ন। খারাপ কাজের প্রস্তাব দিলে আমি পালিয়ে দূতাবাসে গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখান থেকে নিয়ম অনুযায়ী জেলখানা হয়ে দেশে আসি।
এসময় ফেরত আসা নারীদের অনেকে জানালেন, দেশে যদি ভিক্ষা করেও খেতে হয় খাবেন, তারপরও সৌদিতে আর কাজের জন্য যাবেন না। কেননা সেখানে মানসম্মান নিয়ে থাকার কোনো উপায় নেই। সরকার সব জানার পরেও নারীদের কেন সৌদি আরবে কাজের জন্য পাঠাচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ।
এদিকে গত এক মাসে সৌদির জেলখানার মহিলা সেল থেকে দুই শতাধিক বাংলাদেশি নারী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। গতকালও দেশে আসা এ ৩০ জনকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফিরিয়ে আনা হয়।
এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাত ৯টায় দিকে অবতরণ করেন। অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।