কথায় বলে ‘ঝোঁকে বাঙালি’। অতীব সত্য কথা। ঝোঁকে বাঙালি কথাটি মানুষ নেতিবাচক অর্থে নিলেও আমার কাছে এর ব্যাখ্যা ভিন্ন। বাঙালি এতই সহজ-সরল যে, যে যা কিছু বলে, আমরা তা সহজে বিশ্বাস করি। প্রসঙ্গ ছিল মরিঙ্গা বা শজনে পাতা।
ইংরেজিতে ড্রাম স্টিক নামে পরিচিত ফলটি আমরা তরকারি হিসেবে খাদ্যে ব্যবহার করি। খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, রসায়নবিদসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা কর্তৃক গবেষণায় দেখা গেছে যে শজনের পাতায় রয়েছে বহুবিধ পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। এসব গুণ অন্য অনেক খাবারে নেই। তাই শজনের পাতাকে বলা হয় সুপার ফুড।
শজনের এই বহুবিধ পুষ্টি উপাদান ও ঔষধি গুণাগুণের কথা বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে গেছে এবং মানুষ মরিঙ্গা খাওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যেভাবে একসময় মানুষ ঝুঁকেছিল জিংসেং, মাশরুম ও কালিজিরার দিকে।
কিন্তু মরিঙ্গা বা শজনে পাতা খাওয়ার আগে কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে-বুঝে তারপর খেতে হবে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দুর্গাপুরের শজনে যাচ্ছে সারা দেশেস্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দুর্গাপুরের শজনে যাচ্ছে সারা দেশে
রাস্তার পাশে, ইটখোলার পাশে, ইন্ডাস্ট্রিজের পাশে এখন প্রচুর শজনে চাষ হচ্ছে। এই শজনে পাতা আপনার ভালো করার চেয়ে ক্ষতি করবে বেশি। এ পাতার কার্বন শোষণক্ষমতা বেশি। তাই যেখানে-সেখানে জন্মানো শজনে পাতা খাওয়া মানেই হচ্ছে দূষণে ভরা পাতা খাচ্ছেন।
তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে বেশি। বাহারি চটকদার বিজ্ঞাপনে না তাকিয়ে আপনাকে বুঝতে হবে, যাঁরা এটি বিক্রি করছেন, তাঁদের পাতা জোগাড় করার উৎস কোথায়। তাঁরা যেখান থেকে পাতা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন সেটা দূষণমুক্ত কি না। এসব ভেবে তারপর শজনে পাতা খেতে পারেন।
বাণিজ্যিকভাবে শজনে চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদেরবাণিজ্যিকভাবে শজনে চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের শজনে পুষ্টিসমৃদ্ধ উদ্ভিদ যা বহু শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যগত ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: শজনে পাতা কোলেস্টেরলের মাত্রা ও বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে এবং হৃদ্রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো: এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎস, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষায় সাহায্য করতে পারে।রক্তশূন্যতার চিকিৎসায়: শজনে আয়রনের ভালো উৎস, যা লোহিত রক্তকণিকা গঠনের জন্য অপরিহার্য খনিজ।
উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে: শজনের সবুজ পাতায় থাকে ক্লোরোফিল। এটি শরীরের তাপ ঠিক রাখতে সহায়তা করে, যে কারণে অতিরিক্ত চিনি রক্তে না রেখে কোষে পাঠিয়ে দেয়। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ঠিক একই কারণে উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হজম-প্রক্রিয়া উন্নত করে: শজনে খাদ্য আঁশের একটি ভালো উৎস। ফলে এটি হজম-প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: শজনের প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য দেখানো হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়। প্রদাহ আঘাত বা সংক্রমণের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হৃদ্রোগ, ক্যানসার এবং আর্থ্রাইটিসসহ বেশ কয়েকটি রোগের সঙ্গে যুক্ত। শজনে এ ধরনের প্রদাহ রোধ করতে সহায়তা করে।
এমন স্বাস্থ্যগুণের মরিঙ্গা বা শজনে খাওয়া উচিত জেনে-বুঝে।