চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ইরানে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ইরানি কর্তৃপক্ষের নানামুখী দমন-পীড়নের পরও বিক্ষোভে ভাটা পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে সর্থনের অভিযোগে ইরানে দু’জন প্রখ্যাত অভিনেত্রীকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃত দু’জন অভীনেত্রীই অতীতে তাদের অভিনয়শৈলীর কারণে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সোমবার (২১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ার জন্য দুই বিশিষ্ট ইরানি অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ইরানের রাষ্ট্র-চালিত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ওই দুই অভিনেত্রীর নাম হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি এবং কাতায়ুন রিয়াহি।
ইরানের বার্তাসংস্থা ইরনা বলছে, গ্রেপ্তারকৃত হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি এবং কাতায়ুন রিয়াহি ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে যোগসাজশ ও নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত। এছাড়া উভয় অভিনেত্রীই এর আগে তাদের মাথার স্কার্ফ ছাড়াই জনসমক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন। যা বিক্ষোভকারীদের সাথে সংহতির একটি প্রতীক।
অবশ্য গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি এই তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।
মূলত এরপর থেকেই টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বিপর্যস্ত ইরান। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।
বিবিসি বলছে, হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি এবং কাতায়ুন রিয়াহি উভয়ই একাধিক পুরস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী। রোববার ইরানের প্রসিকিউটর অফিসের নির্দেশে এই দু’জনকে আটক করা হয় বলে ইরনা জানিয়েছে।
আটক হওয়ার আগে হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘যাই ঘটুক না কেন, জেনে রাখুন, বরাবরের মতো আমি (এবারও) ইরানের জনগণের পাশে থাকব’। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ পোস্ট।’