খেলা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খেলা হবে। আমি বলছি খেলা হবে- খুনের রাজনীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে লুটপাটের বিরুদ্ধে। খারাপ কী বলেছি? খেলা হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে খেলা বন্ধের আহ্বান জানালে ওবায়দুল কাদের খেলা চালু রাখার কথা বলেন। বিএনপির শাসনামলে জিরো উন্নতি এবং তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও খুনের বিরুদ্ধে খেলা হবে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
হারুনুর রশীদ ‘জনঅসন্তোষ’ ও ‘জনদুর্ভোগ’-এর কথা উল্লেখ করে সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘দেশ এখন জনদুর্ভোগের দেশে পরিণত হয়েছে। এই জনঅসন্তোষকে লাঘব করার সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না।’
বিমানবন্দর সড়কে যানজটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যানজটের কারণে গত ২৬ অক্টোবর সকালে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নেমে বিমানবন্দর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। বিমানের নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা পর পৌঁছাই। পথে শত শত বিমানযাত্রী বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর সরকারকে গালিগালাজ করছে। এটা এক দিনের সমস্যা নয়। ঢাকা-গাজীপুর সড়ক প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে বিএনপির এমপি আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীদের জন্য যথাযথ ট্রাফিকিং ব্যবস্থাসহ আলাদা প্যাসেজ তৈরির দাবি করেন। হারুন বিমানবন্দরে তল্লাশির নামে যাত্রীদের হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ করেন।’
সড়ক পরিবহণ মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী প্রায়ই বলছেন খেলা হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর খেলা হবে। আমরা এমন খেলা দেখতে চাচ্ছি না যে জনদুর্ভোগে মানুষ পড়েন। এ দেশে দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ নিয়ে গত কয়েক মাস যাবৎ সভা-সমাবেশ করছে বিএনপি। আপনি কেন পরিবহণ বন্ধ করছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে বলেন, কী কারণে পরিবহণ বন্ধ হয়েছে বলতে পারব না। দেশ চালাচ্ছেন কেন আপনারা?’
হারুন বলেন, ‘সরকারকে বলব রাজনৈতিক সাংস্কৃতিতে ফিরে আসুন। দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধী দলকে যে সভা-সমাবেশ করতে দেন না, সেই জায়গায় একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। আমি মনে করি, খেলা বন্ধ করুন। খেলা বন্ধ করে সত্যিকার অর্থে দেশকে একটি গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’
পরে হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দল হলেই বিরোধিতার খাতিয়ে বিরোধিতা করা কালচারে পরিণত হয়েছে। গাজীপুরের যে প্রকল্প—পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, মেট্রোরেল সামনে হচ্ছে। এলিভেটেড এগিয়ে গেছে। কর্ণফুলী টানেল রেডি। কী চান আর? একটা সরকার এতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেদিকে তাকান ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ওভারপাস। আপনাদের সময় কী ছিল? জিরো। ওই জিরোর বিরুদ্ধে খেলা হবে। ওই জিরো যে করছেন, ভোগান্তিতে রাখছেন লাখো-কোটি মানুষকে। তার বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
ঢাকা-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘গাজীপুরে পানির লাইন খুবই খারাপ। আমি নিজেও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। এটাকে গলার কাটাও বলেছি। স্বীকার করেছি। এইসব স্বীকার করার কালচার আপনাদের মধ্যে নেই। প্রকাশ্যে বলেছি প্রকল্পটার ডিজাইনে একটু ত্রুটি ছিল। সে কারণে প্রব্লেম (সমস্যা) হয়েছে। কিন্তু আজকে যান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ওই রাস্তা এখন স্বাভাবিক। ৬ তারিখে ইনকামিংটা খুলে দেব। না জেনে কথা বলবেন না। এত কাজ সরকার করছে- একটাতে ভুলত্রুটি হতে পারে। আমরা তো স্বীকার করেছি। অস্বীকার করিনি।’
বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে পরিবহণ ধর্মঘট নিয়ে হারুনের অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাস ধর্মঘট কেন হয়েছে শিমুল বিশ্বাসকে (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) জিজ্ঞাসা করুন। কেন মন্ত্রী বলবে? সে পরিবহণের নেতা। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেক্রেটারি বাসদ। প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগ (শাজাহান খান)। আর মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির। সেক্রেটারি আওয়ামী লীগ-এনায়েত। ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের শিমুল বিশ্বাস। সে কোন দলের? সে একটা স্টেটমেন্ট দেয় না কেন? সে বিএনপির নাকি অন্য কোনো দলের? আপনাদের দলের নেতা। তাকে জিজ্ঞাসা করেন।
এ সময় হারুন হেসে উঠলে জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, হাসেন কেন? আগুনে বাস পুড়িয়েছেন তো? আগুনে বাস পোড়ালে ভালো লাগে। বাসওয়ালারা এখন আর বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। এরা বিএনপিকে দেখলেই মনে করে আগুন নিয়ে আসছে। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে পেট্রলবোমা। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে ককটেল। এখন আবার পতাকা। লাঠিসোটার সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এসবের বিরুদ্ধে খেলা হবে।