রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৩০টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার ঋণের পরিমাণ ৩১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাবে এই ঋণের মধ্যে খেলাপি বা শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৩০টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৭৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অর্থাত্ এই ছয় মাসে ঋণের আকার বেড়েছে ৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো যে পরিমাণ মুনাফা করছে, সামগ্রিকভাবে তার চেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে এসব সংস্থার নীট মুনাফা হয়েছে ৯ হাজার ২৯৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যেসব সংস্থা মুনাফা করেছে তা লভ্যাংশ হিসেবে একই সময়ে ২ হাজার ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেছে। অর্থাত্ সরকারি এই সংস্থাগুলো সামগ্রিকভাবে যে পরিমাণ মুনাফা করছে তার চেয়ে বেশি ব্যাংকগুলোতে ঋণ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে উত্পাদিত পণ্য ও সেবার মান বাড়িয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্যমান ও সেবার পর্যায়ে উন্নীত করা গেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু প্রতিবছর সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে লোকসান বাড়ছে। কয়েকটি লাভজনক হলেও সামগ্রিকভাবে মুনাফার চেয়ে ঋণের অংশটা বেশি।
এর পরেও রাষ্ট্রায়ত্ত খাত বেসরকারিকরণ কর্মসূচি সত্ত্বেও জাতীয় উত্পাদন, মূল্যসংযোজন, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাসমূহ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে বিদ্যুত্ ও গ্যাস, পরিবহন, যাতায়াত এবং সেবা খাতে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে বিদ্যমান সকল অ-আর্থিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় মোট পরিচালন রাজস্ব ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে উত্পাদন ব্যয়ের নিরিখে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ হাজার ২৫৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাবে যে সকল সংস্থার নিকট রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে এই সংস্থার ঋণের আকার দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। সরকারি ব্যাংকগুলোতে তাদের ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে যাওয়ায় বিগত বছরগুলোতে তেলের দাম কমানো হয়নি। তাই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ
পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ৭৫০ কোটি টাকা সরকারকে মুনাফা প্রদান করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এর পরেও প্রতিষ্ঠানটির সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ রয়েছে ৪ হাজার ১৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলোর ঋণ রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) ৩ হাজার ৮৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) ৬৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) ৭৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ২ হাজার ৫৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) ৬২৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিসি) ৯৪৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ঢাকা ওয়াসার ৪৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, যে সকল সংস্থার নিকট সর্বোচ্চ খেলাপি বা শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণ রয়েছে সেগুলো হলো বিসিআইসি (২০.১৭ কোটি টাকা), বিটিএমসি (১১ কোটি টাকা), বিজেএমসি (১২.৪৮ কোটি টাকা), বিএডিসি (২১.২৭ কোটি টাকা), টিসিবি (১১.০৩ কোটি টাকা), বিটিবি (১০.৫২ কোটি টাকা)।